জীবন বৃত্তান্ত
উত্তরে নওগাঁ, দক্ষিনে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, কুষ্টিয়া ও গঙ্গানদী, পুর্বে নাটোর, পশ্চিমে নবাবগঞ্জ, মাঝখানে হয়রত শাহদৌলা (রা) মাজার। এখানে অবস্থান বিজয় সেনের রাজধানী খ্যাত। প্রাচিন বাংলার পুন্ড্রবর্ধন নামক জনপদের অমত্মরভুক্ত আধুনিক রাজশাহী জেলার অমত্মর্গত বাঘা উপজেলাধীন ২ নং গড়গড়ী ইউনিয়নের ব্রাহ্মনডাঙ্গা গ্রামে ৩১/১২/১৯৫৪ ইং তারিখে আমার জন্ম, বর্তমানে বাসস্থান সরেরহাট গ্রামে । বাবা মা বেচে নেই। আমি একজন এতিম। স্ত্রী পুত্র কন্যা সমত্মান ও এতিম অনাত শিশুদের লইয়া আমার জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। ১৯৫৯ ইং সালে সুশিক্ষার জন্য দাদপুর গড়গড়ী সরকারী প্রাথমিক বিধ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে আমার বাবা মা ভর্তি করেন। ১৯৬৪ ইং সালে প্রাইমারি পাশ করার পর ১৯৬৫ ইং সালে কালিদাসখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ১৯৬৯ ইং সালে এসএসসি পাশ করার পর ,আব্দুলপুর মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হই।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ ইং শিক্ষাবর্ষে এইচ এসসি পাশ করি ও শাহদৌলা ডিগ্রি কলেজে বি,এ ভর্তি হই। সাংসারিক অভাবের জন্য শিক্ষা জীবন আমার বন্ধ হয়ে যায়। আমার বিধাব জননী মোসাঃ রাবিয়া খাতুন আমার মামাতো বোন মোসাঃ মেহেরম্নন্নেছার সঙ্গে বিবাহ দেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিলে আমি মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসাবে মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করি। যুদ্ধকালীন অনেক শিশু সমত্মান এতিম হয়ে যায় এবং অসহায় অবস্থায় ঘুরতে থাকে।এই দৃশ্য দেখে আমার মন বিচলিত হয়ে পড়ে। এতিম শিশুদের কিভাবে প্রতিপালন করা যায় এই চিমত্মা আমার মনে দানা বাধঁতে থাকে। ১৯৮৪ ইং সালে এই স্বপ্ন বাসত্মবায়নের লক্ষ্যএকটি এতিমখানা স্থাপন করি, নাম রাখা হয় সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন। ৫ হইতে ৯ বৎসর বয়স্ক এতিম অনাত ও পথ শিশুদের এতিম খানায় ভর্তি করা হয়। নবজাতক রাসত্মায় কুড়িয়ে পাওয়া সমত্মানদেরও প্রতিপালনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এতিম শিশুদের ভর্তির অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ৫০ জন শিশু ভর্তি করে এতিমখানার কাজ শুরম্ন হয়। এরপরে এতিমের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে নিবাসির সংখ্যা ১৫৯ জন। ছেলে ১১৮জন মেয়ে ৫১ জন। এদের প্রতিপালনের সমসত্ম খরচ আমাকে বহন করতে হয়। আমার স্ত্রী নিজ নামীয় ১৭/১৮ বিঘা সম্পত্তি এতিমখানার সুদিন ও দুর্দিনে বিক্রয় করে আমার উদ্দেশ্য ,লক্ষ্য বাসত্মবায়নে সহায়তা করেন।এতিমখানা স্থাপনে আমাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। যার কারনে বহু টাকা ঋণী হয়ে পরিশেষে বাবা মার প্রদত্ত ঘরবাড়ীর ও সম্পত্তি বিক্রয় করে বর্তমানে আমরা স্বপরিবারে এতিমখানায় বসবাস করছি। আমার দুই ছেলে ও চার মেয়ে এবং এতিম খানার ১৬৯ জন ছেলেমেয়ে লইয়া বর্তমানে আমার সংসার অতিবাহিত হচ্ছে। এদের প্রতিপালনের জন্য আমার স্ত্রী নিজ হাতে রান্না-বান্না ও অন্যান্য যাবতীয় কার্য্যাদি করে থাকে শুধুমাত্র একমুষ্ঠি অন্নের বিনিময়ে। আমার চার মেয়েকে বিবাহ দিয়েছি,বড় ছেলে রাজশাহী বি্শ্ববিদ্যালয় কলেজে থেকে জেনারেল ইতিহাসে বি,এ অনার্স ও এম,এ পাশ করেছে। আমার ছোট ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভুগোলে বি,এস,সি অনার্স পাশ করার পরে এম,এস,সি পরিক্ষার্থী। এতিমখানার ছেলে-মেয়েরা স্থানীয় স্কুল কলেজে ও মাদরাসায় লিখা পড়া করে। ইহা ছাড়া কারিগরী শিক্ষার ও সুব্যস্থা আছে তবে অর্থের অভাবে পুরোপুরি বাসত্মবায়ন করা সম্ভব হইতেছে না। তবে
নিজের বলতে সম্পদ আমার আর নেই, তবে আছে এতিমদের প্রতি সেণহ ও ভালবাসা। আমি একজন পলস্নী চিকিৎসক, জনগনের সেবার জন্য চিকিৎসা করে যাহা উপার্জন করি তাহা দ্বারা কোন রকমে এতিম শিশুদের ও নিজ সমত্মানদের প্রতিপালন করে থাকি। এতিমখানার জন্মলগ্ন হইতে এখন পর্যমত্ম আমি ও আমার স্ত্রী মেহেরম্নন্নেছা জনগনের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করি। ১৯৮৩-৮৪ ইং অর্থ বৎসরে কারিতাস রাজশাহী,আঞ্চলিক কার্যালয় গ্রহ নির্মানের জন্য সর্ব প্রথম আর্থিক সাহায্য প্রদান করেন এর পরে অস্থায়ীভাবে নিবাসীদের প্রতিপালনের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। বর্তমানে কারিতাসের আর্থিক সাহায্য বন্ধ। বর্তমান সরকারী অনুদান পাই মাত্র ৪২ জনের। গত ২৬/০৮/২০০৫ ইং সালে প্রথম আলোর সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ এতিম খানা সম্পর্কে বিসত্মারিত প্রতিবেদন সংবাদ পত্রে প্রকাশ করলে,এতিম হিতৈষী জনগনের নিকট হইতে যাকাতের টাকার ও আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায়। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার শুরম্ন করেন। কোন রকম এতিম শিশুরা প্রতিপালিত হচ্ছে,তবে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ যথেষ্ট নহে। এরপর হইতে সাহায্যের পরিমাণ বাড়লেও অনাথ শিশুদের জন্য ভিক্ষার ঝুলি বনধ হয় নাই।
সরেরহাট কল্যানী শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা কে সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রসঙ্গেঃ-
বাংলাদেশ ইউনিলিভার কর্তৃক আর্থিক অর্থায়নে ও সহযোগিতায় সারা বাংলাদেশে সাদা মনের মানুষ খোজা খুজি শুরম্ন হইলে সারা বাংলাদেশে ১০ জন সাদা মনের মানুষ নির্বাচিত হয়। ভিডিও চিত্র করার ও প্রচার করার সার্বিক দ্বায়িত্ব এন টিভিকে প্রদান করা হইলে ২৯-১২-২০০৬ ইং তারিখে এন টিভি হইতে আগত সাংবাদিক গণ সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদনের একদিনের কর্মশালার উপর প্রোগ্রাম করেন। ২০০৭ সালের ২০ শে জানুয়ারী হইতে বাংলাদেশের ১০ জন সাদা মনের মানুষের ভিডিও চিত্র প্রচার করা হয়। ২০০৭ সালের ফেব্রম্নয়ারী মাসের ২ তারিখে হোটেল শেরাটন ঢাকায় এই ১০ জন সাদা মনের মানুষকে বাংলাদেশ ইউনিলিভার কর্তৃক সম্মাননা প্রদান করা হয়। ১ লক্ষ্য টাকা পুরুষ্কার, ১ টি স্বর্ণপদক, ১ টি ক্রেষ্ট, ১ টি শেরোয়ানী ও ১ টি সম্মাননা পত্র প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালের ১৩ ই মে সোনাদহ পর্নাপাড়া হাইস্কুল থেকে সাদা মনের মানুষ ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকার ও স্ত্রী মোছাঃ মেহেরম্নন নেছা কে সংবর্ধনা ও ১ টি সেলাই মেশিন প্রদান করা হয় এবং ১৫/০৫/২০০৭ ইং তারিখে বাঘা সমিতির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ১৪ই জুন ২০০৭ সালে নির্মহ মানব সেবক মুক্তিযোদ্ধা জনাব ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সম্মাননা প্রদান করেন রাজশাহী জেলা সমিতি ঢাকা, ২৫ শে মার্চ ২০০৮ সাল স্মৃতি অমস্নান স্বাধীনতা সংগ্রাম বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকারকে ক্রেষ্ট ও সম্মাননা প্রদান করেন রোটারী ক্লাব অব মতিঝিল ঢাকা। এসো বাংলাদেশ গড়ি বিশিষ্ট গুনিজন ২০০৮ সালে ক্রেষ্ট ও সম্মাননা প্রদান করেন ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকারকে জেলা প্রশাসক , রাজশাহী। বৈশাখী উৎসব নাট্যদুয়ার বিশেষ শুভেচ্ছা ও ক্রেষ্ট প্রদান করেন ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকারকে ১৪১৫ বাংলা সাল। ২০১১ইং বই মেলা বাবু শৈলেন্দ্রনাথ স্মৃতি সম্মাননা স্মারক ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকারকে মানব কল্যাণ সংগঠন মনিগ্রাম বাঘা রাজশাহী। ১৪ ই জুলাই ২০১১ ,২২তম অভিষেক অনুষ্ঠান মানব সেবায় বিশেষ অবদান ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকার প্রতিষ্ঠাতা সরেরহাট শিশু সদনকে ক্রেষ্ট ও সম্মাননা প্রদান করেন রোটারী ক্লাব অব মতিঝিল রোটারী জেলা ৩২৮০ বাংলাদেশ ১৪ই জুলাই ২০১১। জাতীয় সমাজ সেবা দিবস ২০১৩ সমাজ সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করেন ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকারকে সরেরহাট কল্যাণী বহুমুখী প্রকল্প, সরেরহাট, বাঘা,রাজশাহী, সমাজ সেবা অধিদপ্তর রাজশাহী। কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ২০১৩ সম্মাননা স্মারক বিশেষ অতিথি জনাব মোঃ সামসুদ্দিন সরকার স্বত্তাধিকারী সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন , সরেরহাট, বাঘা,রাজশাহী। সৌজন্যেঃ বাংলাদেশ স্যাফার ল্যাড স্কুল আহমদপুর,বড়াইগ্রাম ,নাটোর। সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদনের দাতা মোছাঃ মেহেরম্নন নেছাকে সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রদান প্রসঙ্গে ১৫/০২/২০০৭ তারিখে বাঘা সমিতির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পÿ্য বেগম রোকেয়া দিবস ২০১৩ ,জয়িতা অন্বেষণে কার্যক্রমের আওতায় সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ নারী মোছাঃ মেহেরম্নন্নেছা, সরেরহাট বাঘা রাজশাহী।উপজেলা পর্যায়ে সম্মাননা স্মারক, ক্রেষ্ট ও সম্মাননা পত্র প্রদান করেন, উদ্দ্যোগে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সহযোগিতায় বাঘা উপজেলা প্রশাসন।
বৈশাখী আনন্দ মেলা ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান ১৪২১ বঙ্গাব্দ সাদা মনের মানুষ ও সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদনের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ মোঃ সামসুদ্দিন সরকার এর সহধর্মিনী মোছাঃ মেহেরম্নননেছা বাঘা রতন উপাধীতে ভুষিত করে পদক প্রদান করেন আয়োজনে স্বপ্নের ঠিকানা মহিলা সংস্থা,তুলশীপুর, বাঘা, রাজশাহী।
সাদা মনের মানুষ
( ডাঃ মোঃ শামসুদ্দিন সরকার )
স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত
প্রতিষ্ঠাতা/সম্পাদক,
সরেরহাট কল্যাণী শিশু সদন
বাঘা,রাজশাহী।
মোবাঃ ০১৭১৮-৫৪২৪৫৪
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস